ٱلَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِٱلْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَمِمَّا رَزَقْنَـٰهُمْ يُنفِقُونَ ٣
“যারা গায়েবের উপর ঈমান আনে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।”
📚 [সূরা আল-বাকারা: আয়াত ৩]
📝 📌গায়েবের প্রতি ঈমান ও নামাজ কায়েমের গুরুত্ব — সূরা আল-বাকারার আলোকে জীবন বদলের বার্তা
📖 আয়াত:
ٱلَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِٱلْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَمِمَّا رَزَقْنَـٰهُمْ يُنفِقُونَ ٣
বাংলা অনুবাদ:
“যারা গায়েবের উপর ঈমান আনে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।”
📚 [সূরা আল-বাকারা: আয়াত ৩]
💬 🕋 হাদীস
رأس الأمر الإسلام، وعموده الصلاة، وذروة سنامه الجهاد في سبيل الله
“ধর্মের মূল হলো ইসলাম, তার খুঁটি হলো নামাজ, আর সর্বোচ্চ শিখর হলো আল্লাহর পথে জিহাদ।”
— 📗 [তিরমিজি, হাদীস: ২৬১৬]
🧠 আয়াতের তাফসীর ও ব্যাখ্যা (সংক্ষিপ্ত):
এই আয়াতে আল্লাহ্ মুত্তাকীদের তিনটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন:
✅ ১. গায়েবের উপর ঈমান:
“গায়েব” বলতে বোঝায় এমন সকল অদৃশ্য বিষয় — যেমন আল্লাহ, ফেরেশতা, হাশর, জান্নাত-জাহান্নাম ইত্যাদি। যারা এ সব অদেখা বিষয়ের উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখে, তারাই প্রকৃত মুত্তাকী।
✅ ২. নামাজ কায়েম করা:
“ইকামাতুস সালাত” মানে শুধুমাত্র নামাজ পড়া নয়, বরং যথাযথভাবে, সময়মতো, মনোযোগ ও খুশু-খুযু নিয়ে নামাজ আদায় করা।
✅ ৩. আল্লাহর রিযিক থেকে ব্যয় করা:
যে সম্পদ আমরা উপার্জন করি, তা আল্লাহর দেওয়া। মুত্তাকীরা এই রিযিক থেকে গরীব-মিসকিন, আত্মীয়-পরিজন এবং দীন ইসলামের পথে ব্যয় করে।
✅ ১. গায়েব (অদৃশ্য) কী এবং এর প্রতি ঈমান আনার মানে কী?
গায়েব বলতে বোঝানো হয় এমন সব বিষয়, যা মানুষের পাঁচ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপলব্ধি করা যায় না কিন্তু আল্লাহ ও রাসূল ﷺ যে বিষয়ে আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন:
🔹 আল্লাহর অস্তিত্ব
🔹 ফেরেশতাগণ
🔹 কিয়ামত দিবস
🔹 জান্নাত ও জাহান্নাম
🔹 তাকদীর (ভাগ্য)
🔹 কবরের আযাব ও পুরষ্কার
🔹 নবী-রসূলদের প্রতি প্রেরিত অহী
👉 এইসব বিষয়ে কোনো কিছু চোখে না দেখেও পূর্ণ বিশ্বাস রাখা – একে বলে “ঈমান বিল-গায়েব”। এটি মুসলিমদের ইমানের মূল ভিত্তি।
✅ ২. সালাত কায়েম করা মানে শুধু নামাজ পড়া নয়
অনেকেই নামাজ শুধু পড়ে নেয় — কিন্তু কুরআন বলছে: “يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ”, অর্থাৎ “নামাজ কায়েম করে”।
🔹 সময়মতো নিয়মিত নামাজ পড়া
🔹 খুশু (মনোযোগ) সহকারে নামাজ
🔹 জামাতে নামাজ আদায় করা (পুরুষদের জন্য)
🔹 নামাজের যাবতীয় আদব রক্ষা করা
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“আমাদের ও তাদের (কাফেরদের) মাঝে পার্থক্যকারী হলো সালাত।”
— 📘 সহীহ মুসলিম: ৮২, তিরমিজি: ২৬২১
✅ ৩. দান বা ইনফাক — শুধু অর্থ দান নয়
“وَمِمَّا رَزَقْنَـٰهُمْ يُنفِقُونَ” — অর্থাৎ আল্লাহ যা রিজিক দিয়েছেন, তা থেকে তারা ব্যয় করে। এখানে ‘রিজিক’ মানে শুধু অর্থ নয়, বরং:
🔸 সময়
🔸 জ্ঞান
🔸 ভালো আচরণ
🔸 সাহায্য
🔸 খাদ্য
🔸 পরামর্শ
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“সদকা প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরজ।”
সাহাবারা জিজ্ঞেস করল: “যদি তার কিছু না থাকে?”
তিনি বললেন: “সে তার হাত দিয়ে কাজ করবে ও নিজের জন্য উপার্জন করবে এবং সদকা দিবে।”
— 📘 সহীহ বুখারী: ১৪৪৫, মুসলিম: ১০০৮
🧠 মননশীল চিন্তাধারা (Reflection):
আজ আমরা ডিজিটাল দুনিয়ায় বুঁদ হয়ে অনেক অদৃশ্য জিনিসে বিশ্বাস করি (Wi-Fi, Mobile Signal), অথচ গায়েবের বিষয়ে সন্দেহ করি। এটা আমাদের ঈমানের দুর্বলতা।
🕋 যারা গায়েবের উপর ঈমান আনে ও নামাজ কায়েম করে, তারা আল্লাহর নিকট প্রিয় বান্দা। এই আয়াত তাদের পরিচয়। আমাদের উচিত নিজেদেরকে সে শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করা।
📘 হিকমাহ (জ্ঞানগর্ভ উক্তি):
“ঈমান হচ্ছে এমন আলো, যা অদৃশ্যের মধ্যেও সত্য দেখতে শেখায়।”
— ইমাম গাজ্জালি (রহ.)